Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মৌ চাষের প্রেক্ষাপট ও সম্ভাবনা

মৌ চাষের প্রেক্ষাপট ও সম্ভাবনা
মো: খায়রুল আলম
আমাদের দেশে মধু চাষের অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে সুজলা সুফলা ষড়ঋতুর বাংলাদেশ, যার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আছে ফসলের মাঠ, বৃক্ষরাজি, সবজি ও ফলবাগান। এখানে প্রায় প্রত্যেক Ĺতুতেই কোন না কোন ফুল ফোটে। এসব জায়গা থেকে মৌমাছি প্রায় সারা বছরই মধু আহরণ করতে পারে। বর্তমানে প্রায় ২৫০০ জন মৌচাষি বাণিজ্যিকভাবে মধু উৎপাদন করছে এবং বছরে প্রায় ৬ হাজার মে.টন মধু উৎপাদিত হচ্ছে। যথাযথ পরিকল্পনা ও আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে মধুর উৎপাদন এক লক্ষ টনে উন্নীত করা সম্ভব। আর মৌমাছি দ্বারা পরাগায়নের ফলে পরপরাগায়িত ফসলের গড় উৎপাদন ২০-৩০ ভাগ বেড়ে যাবে।
মৌমাছি চাষের ইতিহাস

প্রাচীন কাল থেকে মৌমাছি চাষ করা হলেও ১৮৫৩ সালে বিজ্ঞানী ল্যাং স্ট্রোথ আধুনিক পদ্ধতিতে মৌচাষ শুরু করেন এবং তাকেই আধুনিক মৌচাষের জনক বলা হয়। ১৮৮৪ সালে সর্বপ্রথম একজন ইংরেজ ডকলাস উপমহাদেশে মৌচাষের প্রবর্তন করেন। পরে ড. আক্তার হামিদ খান ১৯৫৮ সালে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম মৌচাষের সূচনা করেন। বাংলাদেশে ১৯৬৩ সালে বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন) প্রথমবার মানুষকে মৌ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করে এবং এরপর থেকে বিভিন্ন সংস্থা মৌমাছি পালন বিষয়ে মানুষকে প্রশিক্ষণ দেয়া, মৌবাক্স বিতরণ করা ইত্যাদি কাজ চালিয়ে যায়। বিসিকের প্রচেষ্টার সাথে পরবর্তীতে ৮০’র দশকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সম্পৃক্ত হয় এবং এর মাধ্যমে বর্তমানে মৌপালন সম্প্রসারণে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
মধুর উপকারিতা

বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা: বলেন ‘সকল পানীয় উপাদানের মধ্যে মধু সর্বোৎকৃষ্ট।’ এ কথা দ্বারা স্পষ্ট যে মধু নিঃসন্দেহে উপকারী। পরবর্তীতে বিজ্ঞানের গবেষণা দ্বারা মধুতে উপস্থিত উপাদানগুলো সম্পর্কে জানা যায়। মধুর প্রধান উপকরণ হলো সুগার, যার মধ্যে ডেক্সট্রোজ, ম্যালটোজ, গ্লুকোজ, লেভিউলোজ এবং সুক্রোজ রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম মধুতে ২৮০-৩০৪ গ্রাম ক্যালরি পাওয়া যায়। মধুতে নিয়সিন, রাইবোফ্লাভিন, ভিটামিন বি, এমাইনো এসিড, প্যান্টোথেনিক রয়েছে, এ ছাড়াও ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফরফরাস, পটাশিয়াম, দস্তা, তামা ইত্যাদি খনিজে ভরপুর মধু। মধুতে কোন ফ্যাট বা কোলেস্টেরল থাকে না। মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্টাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন জীবাণু আক্রমণ রোধ করে কিংবা প্রতিকার করতে পারে, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

বাংলাদেশে মৌচাষের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও সম্ভাবনা

বর্তমানে দেশে দুই হাজার ৫০০ বাণিজ্যিক বা পেশাদার মৌ খামার রয়েছে। অপেশাদার বা সৌখিনভাবে মৌ পালন করছে আরো ২৫ হাজার। তার মধ্যে এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি মৌ বাক্স রয়েছে। গত বছর ১০ হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হয়েছে। এ বছর এখন সরিষার মাঠ থেকে মধু আহরণ করা হচ্ছে। তবে এ বছর ১২ হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। মৌ চাষের প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি চাষিদের উৎপাদিত মধু বাজারজাতকরণে সহায়তা করে যাচ্ছে বিসিক। বাংলাদেশে উৎপদিত ৫০০ মেট্রিক টন মধু জাপান, ভারত ও মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশগুলোতে রপ্তানি হচ্ছে। চাষিরা এখন রপ্তানির জন্য বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষে ঝুঁকছেন। দেশের মৌ খামারগুলো থেকে এক লাখ টন মধু আহরণের সুযোগ রয়েছে। সেই লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। মধুর উৎপাদন বৃদ্ধি, মৌচাষিদের প্রশিক্ষণ ও যাবতীয় উন্নয়নে যৌথভাবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কাজ করছে বিসিক।

জানা গেছে, বিসিক বাণিজ্যিকভাবে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজারের বেশি মৌ চাষিকে আধুনিক পদ্ধতিতে মৌ চাষের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এই কার্যক্রম প্রসারে মৌমাছি পালন স্থায়ী ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপনের একটি পরিকল্পনা নিয়েছে বিসিক। ক্রমাগতভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন মৌচাষি তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া মৌচাষ উপযোগী আরও ১২টি জেলায় বিশেষ খামার সৃষ্টি করে মধু উৎপাদনে কাজ করছে সরকার।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় কৃষকপর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ-৩য় পর্যায় (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের একটি উদ্দেশ্য হলো যথাযথ পরাগায়নের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মৌচাষ। ফসলের পরাগায়ন কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য আগ্রহী বীজ এসএমইকে মোট ২০০০টি উন্নতমানের মৌবাক্স, মধু এক্সট্রাক্টর, এক্সেসরিজ এবং মৌ-কলোনি সরবরাহ করা হয়েছে। এ সব বক্স থেকে প্রতি বছর ৪০ মে. টন করে অর্থাৎ প্রকল্পাধীন সময়ে প্রায় ১৬০ মে. টন উৎকৃষ্ট মানের মধু উৎপাদিত হবে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫ মে.টন মধু উৎপন্ন হয়েছে। প্রকল্পাধীন সময়ে প্রায় ১৬০ মে. টন উৎকৃষ্ট মানের মধু উৎপাদিত হবে যার মূল্যমান প্রায় ২.৫০ কোটি টাকা।

প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৯০০ জন কর্মকর্তার ডাল, তেল ও মসলা ফসলের উৎপাদন প্রযুক্তি ও মৌপালনের উপর ৬ দিনব্যাপী টিওটি কোর্স সম্পন্ন করা হয়েছে।
এ ছাড়াও ৬০ জন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মৌচাষের ওপর ৩ মাসের সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করেছেন, যারা বর্তমানে মাঠপর্যায়ে মৌচাষে মৌ-বিশেষজ্ঞ হিসেবে কৃষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচিসহ মৌ-পালন বিষয়ে সম্পৃক্ত রয়েছেন। প্রকল্পের আওতায় এসএমইগণকে মৌ বক্স সরবরাহের ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মধু উৎপাদন এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ পরপরাগী ফসলের পরাগায়ন নিশ্চিত হচ্ছে। প্রকল্পে মৌচাষ সম্পৃক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত ১৫-৩০% ফলন বৃদ্ধিসহ মধু উৎপাদন ও পরিবেশবান্ধব চাষাবাদে কৃষকগণ উৎসাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশের মধু একটি সম্ভাবনাময় অর্থকরী খাত। দেশে বর্তমানে দুই প্রজাতির মৌমাছির দ্বারা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে  মৌ-বাক্সে চাষ করা হয়। মৌ চাষ বিশেষজ্ঞ ও কৃষি গবেষকদের মতে ফসলের মাঠে মৌমাছি বিচরণ করলে সেখানে বাড়তি পরাগায়নের কারণে ফসলের উৎপাদন ৩০ শতাংশ বাড়বে। তার মানে মৌচাষের মাধ্যমে মধু আহরণে লাভ দুটি-১) অর্থকরি খাত হিসেবে মধু আহরণে সমৃদ্ধি, ২) শস্য বা মধুভিত্তিক  কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধি। অথচ অধিকাংশ কৃষকের এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে চাষিপর্যায়ে এ ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। মৌচাষিরা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৌসুমে মৌসুমে সরিষা, ধনিয়া, তিল কালজিরা, লিচু এসব ফসলের জমিতে বা বাগানে মৌ বাক্স বসিয়ে মধু আহরণ করে। আধুনিক পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে মৌ চাষ করে শত শত মেট্রিক টন মধু উৎপাদন করা হচ্ছে। এর ফলে মধু আহরিত শস্য যেমন সরিষা, তিল, কালিজিরা, লিচু ইত্যাদির ফলনও বেড়েছে অনেকগুণ। মৌচাষিরা বিভিন্ন ঋতুতে তাদের মৌবাক্স নিয়ে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, শেরপুর, সাভার, দিনাজপুর, রাজশাহী বরগুনা ও সুন্দরবনের সাতক্ষীরায় মধু সংগ্রহে চলে যান। একটা নির্দিষ্ট মৌসুমে তারা অবস্থান করেন এবং মধু সংগ্রহ করে ফিরে আসেন। সংগ্রহকারীর কেউ কেউ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে মধু বিক্রি করেন। বড় খামারিরা সংগ্রহীত মধু প্রসেসিং প্লান্টে পরিশোধন করে বাজারজাত করেন। সরিষা, লিচু, তিল ও কালিজিরা ফুল থেকে সংগৃহীত মধু আলাদা আলাদাভাবে বাজারজাত করছেন ব্যবসায়ীরা।

২০১৯-২০ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, মধু উৎপাদনে শীর্ষ দেশ চীন। এশিয়ার মাঝে ভিয়েতনাম এবং ভারতের মধু রপ্তানিতে রয়েছে উল্লেখযোগ্য স্থান। দেশের বাজারে মধু সরবরাহের পাশাপাশি বাংলাদেশ এখন ভারত, থাইল্যান্ড, আরব আমিরাত ইত্যাদি দেশে মধু রপ্তানিতে বংলাদেশের অবস্থান ৮৩তম এবং আমদানিতে ৬৬তম।

দেখা গেছে, বাংলাদেশে যে পরিমাণ জমিতে সরিষা, লিচু আম তিল ইত্যাদি ফসলের চাষ হয় তার মাত্র ১০ ভাগ জমিতে মৌ চাষ হয়। তাই বলা যায় যে, মধু চাষে বাংলাদেশের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। শতভাগ জমি যদি মৌ চাষের আওতায় আনা সম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে ফসল উৎপাদন যেভাবে বাড়বে, মধু উৎপাদনও অনুরূপভাবে বাড়বে।

বংলাদেশে মৌ খামার গড়ে তোলার যথেষ্ট অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান। এপিস সেরানা এ দেশীয় প্রজাতি এবং সহজে  লালন-পালন যোগ্য। তাছাড়া এর উৎপাদন ক্ষমতাও মোটামুটি ভালো। ইউরোপীয় গোষ্ঠীর এপিস মেলিফেরা প্রজাতিও আমাদের দেশের আবহাওয়ায় সহনশীল হয়েছে এবং দেশে এ প্রজাতির খামার গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের সুন্দরবন, মধুপুর বনাঞ্চল ও পার্বত্য এলাকায় মৌমাছির খামর গড়ে তোলার অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান। অধিকন্তু আমাদের দেশে আবহাওয়া এবং সারা বছর মাঠে সুবিধা সমৃদ্ধ ফসলের সমারোহ থাকে। পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী বিশেষত বেদে এবং পাহাড়ে বসবাসকারীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে মৌ খামার গড়ে তুলতে আগ্রহী করা যেতে পারে।

বাণিজ্যিকভাবে মৌমাছি চাষের মাধ্যমে আমাদের দেশে কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে এবং মৌ কলোনি ফসলের পরাগায়নে ব্যবহার করে ফসলের অধিক ফলনপ্রাপ্তি সম্ভব। মৌ কলোনির উপজাত মানুষের পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে পারে। তাছাড়া ওষুধ ও নানা শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার এবং বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের যথেষ্ট সম্ভাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কৃষকদের মৌ খামার প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করছে। দেশে প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে মৌ খামার ব্যাপকতা লাভ করলে দেশে গুণগত মানের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিতে ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে এবং সেই সঙ্গে মৌ কলোনির উপজাত এবং সেসব থেকে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।

লেখক : প্রকল্প পরিচালক, কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ, উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প-৩য় পর্যায় (১ম সংশোধিত), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা। ফোন  : ৫৫০২৮২১৬, ই-মেইল : ঢ়ফঢ়ড়ংঢ়৩ৎফ@মসধরষ.পড়স


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon